সভ্যতা হাঁটছে…….

সভ্যতা হাঁটছে…….

সভ্যতা হাঁটছে । সরি, সভ্যতা দৌড়াচ্ছে । আর তার সাথে তাল মিলিয়ে ছুটছে এ দেশের অবচেতনের দাদাগিরি – র্যাগিং । সামাজিক র্যাগিং – দাদাগিরি, নেতাগিরি ; রাজনৈতিক র্যাগিং- ভোটলুঠ, বাধা দিলে পেটে দানা ভরার হুমকি ; ধর্মীয় র্যাগিং – ধর্মের নামে সুড়সুড়ি দিয়ে দাঙ্গা লাগানো ; আর এসব র্যাগিংকে ছাপিয়ে গেছে শিক্ষাক্ষেত্রে র্যাগিং । শিক্ষার নামে বর্বরতা, সভ্যতার নামে অসভ্যতা ছাড়া আর কোনও সুফল আছে কি না বর্তমান সময়ে এই র্যাগিং-এর, তা ভাববার সময় এসে গেছে বোধহয় । দেশ ও জাতির উন্নয়নের মাপকাঠি যদি শিক্ষা হয়, আর সেই শিক্ষায় যদি নবাগত ছাত্রের প্রথম পাঠই হয় – অশ্লীল প্রশ্নের উত্তর দেওয়া ; কিভাবে সরল, তরল, ড্রাই নেশা করতে হয় তা করে দেখানো, না পারলে বেদম প্রহর ; শীতের রাতে কিভাবে জামা কাপড় খুলে ছোটা ভীম সাজতে হয়, তা শেখানো ; ছাদের কার্নিসের ওপর দিয়ে হাঁটা প্রাকটিস ; চিৎকার করে নিজের মা-বাবার নামে গালমন্দ করে কিভাবে গান করতে হয়, তা করে দেখানো, না পারলে শরীরে জ্বলন্ত সিগারেটের ছ্যাঁকা কিভাবে সহ্য করতে হয় তা হাতে কলমে শিক্ষা ; বিকৃত কামনা, লালসা কিভাবে মেটাতে হয় তা কারো ওপর প্রয়োগ করে দেখানো, না পারলে অবাঞ্চিত মৃত্যুও হতে পারে । র্যাগিংকারী সিনিয়র বা বহিরাগতরা যতই বলুক না কেন, সিনিয়র দাদা-দিদিদের সাথে নবাগত ছাত্রছাত্রীদের মেলবন্ধনই হল র্যাগিং – তা মিথ্যে । আসলে, র্যাগিং হল হিংস্রতার বহিঃপ্রকাশ । তা নাহলে কেন, এই অমানবিক, উৎকট, হিংস্র কৌতুকের শিকার হয়ে কত সম্ভাবনাময় ছেলেমেয়েরা তাদের অসহায় বাবা-মায়ের কোল খালি করে মৃত্যুর কোলে আশ্রয় নেয় ? আসলে, র্যাগাররা-ই হল অসুস্থ, বিকৃত ভাবনা-চিন্তার মানুষ । র্যাগিং-এর মধ্য দিয়ে তারা নিজেদের হিরো ভাবে, এতে তারা গর্বিত হয় । ভাবতেও অবাক লাগে, যাদের হাতে মুমূর্ষু মানুষ বাঁচবে – সেই সিনিয়র ডাক্তারি পড়ুয়ারা র্যাগার সেজে আরেক সদ্য ডাক্তার পড়ুয়াকে মেরে ফেলছে ? ভাবা কি যায়, যাদের স্বপ্ন মহাকাশ ছোঁয়ার সেইসব ইঞ্জিনিয়ার সিনিয়র ছাত্র র্যাগার ? যারা একদিন কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের গণ্ডি পেরিয়ে স্কুল, কলেজের শিক্ষাঙ্গনে আলো জ্বালাবে শিক্ষক হয়ে, কিংবা কোনও সরকারি বা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্তব্যরত থেকে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবে, তারা এককালের র্যাগার ? প্রশ্ন হল, তাহলে দেশ এগোচ্ছে কাদের হাত ধরে ? আমি জানি, আপনারা অনেকেই বলবেন, যারা এককালে র্যাগার ছিল, সেইসব বিকৃত মস্তিষ্কের ছাত্রছাত্রীরা ছাত্র-দশাতেই কিংবা কয়েকবছরের প্রাক্তন তকমা নিয়ে হারিয়ে গেছে সমাজের আবর্জনায় – বেড়ে ওঠার সুযোগ পায়নি । বেশ, মেনেই নিলাম । কিন্তু র্যাগারদের উত্তরসূরীরা যে, হারিয়ে যাবার আগে আমার, আপনার ঘরের কত সম্ভাবনাকে গলার নলি টিপে খুন করছে ? তার কি আদৌ কোনও প্রতিকার নেই ? আমরা কি পারি না, সংখ্যায় নগণ্য বিকৃত মানসিক বোধে উদ্বুদ্ধ এই র্যাগারদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে সমূলে উৎখাত করতে ? আমার অনেক পাঠক বন্ধু আবার প্রশ্ন তুলবেন জানি, তাহলে সামাজিক, রাজনৈতিক, ধর্মীয় র্যাগিং যারা করে চলেছে, তাদের কি হবে ?