আইসক্রিমের ওপর……..

আইসক্রিমের ওপর……..

আইসক্রিমের ওপর নিষেধাজ্ঞা ঠিক মানতে না পেরে আমি তার দিকে অবিশ্বাসের চোখে তাকাতেই সে বলল, ‘জানিস কী রকম বাজে জল দিয়ে আইসক্রিম তৈরী হয়?’
আমি মাথা নেড়ে বললাম, ‘না।’
সঙ্গে সঙ্গে ছোট্ট টোকা মাথায় পড়ল, ‘এর জন্যে বই পড়তে হয়। পড়াশুনা করবি না, জানবি কোত্থেকে?’
মনে মনে বললাম, ‘ইস, উনি কী পড়াশুনো করে, যার জন্যে প্রতি বছর ক্লাসে ফেল করে।’
‘কী রে কিছু বললি?’ তার কথায় মাথা নাড়লাম আমি।
-তাহলে ভূতে ধরা রোগীর মতো বিড়বিড় করছিস কেন?
ভূত শব্দটা কানে আসতেই কাল রাতের ঘটনাগুলো মনের মধ্যে উঁকি মারা শুরু করল। মনের অজান্তেই মুখ দিয়ে বেরিয়ে এল, ‘তুমি ভূত দেখেছ?’
-হ্যাঁ।
-সত্যি?
আমার মুখের ভাব দেখে হেসে উঠল সে। তার হাসির কারণ না বুঝতে পেরে আমি ওকে বললাম, ‘হাসছ যে বড়ো, সত্যি করে বল না কোথায় দেখলে?’
-এই তো আমার সামনে দাঁড়িয়ে আছে, খ্যাংড়া ভূত।
রাগ হল। মুখ গোমড়া করে আমাকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে সে বলে উঠল, ‘এই নে ছোলা খা।’
অন্যদিনের মতো হাত পেতে ছোলা নিতে কেমন যেন প্রেসটিজে লাগল, সে আমার হাত ধরে ছোলা দিতে গিয়ে দেখল আমি মুঠি করে আছি, তা দেখে সে বলে উঠল, ‘দেখেছিস ক’দিন ছোলা পেটে পড়তেই হাতের মুঠি কেমন শক্ত হয়ে উঠেছে। ক’দিন নিয়মিত খা, দেখবি ওসব ভূতটুত তোকে দেখে ছুটে পালাবে।’
আমি তার মুখের দিকে তাকিয়ে বলে উঠলাম, ‘সত্যি করে বল না দাদা?’
-কী ?
-ভূত দেখেছ তুমি?
-ধুর বোকা, ভূতটুত আছে না কি?
‘তাহলে কাল রাতে যে আমি – বলেই থেমে গেলাম আমি। তা দেখে অরবিন্দদা বলে উঠল, ‘কাল রাতে কী?’
আমি বললাম, ‘না, কিছু না, কই, ছোলা দাও।’
সে আমার হাতে ছোলা দিতে দিতে বলল, ‘মনে ভয় পুষে রাখবি নে, তাহলে আরও ভয় পাবি। কাল রাতে কি হয়েছিল বল? ‘
এমনি নাছোড়বান্দা সে যে, আমার মুখ থেকে এক এক করে সব শুনে নিল। তারপর অবাক হয়ে সে বলল, ‘হ্যাঁ রে, তুই অত রাত পর্যন্ত পড়িস? বাঃ, খুব ভালো। আমার মতো তোকে আর এক ক্লাসে দু’বার, তিনবার করে থাকতে হবে না।’ শেষের কথাগুলো তার গলায় কেমন যেন ভারী ভারী লাগল। কিছু বুঝে ওঠার আগে সে বলে উঠল, ‘হ্যাঁ রে গল্পের বই পড়ে পড়ে তুই তো গুরুপদকে শোনাস শুনলাম, তা কোনও বইতে পড়িসনি, রাতে প্যাঁচার ডাক শুনলে যে কেউ ভাববে – কেউ কাঁদছে। ভালো করে খেয়াল করে দেখবি, তোদের ওই নারকেল গাছে কিংবা বাঁশ ঝাড়ে রাতে প্যাঁচা আসে।’
-কিন্তু কাল রাতে সত্যিই আমি তিন,চার বার মেয়েদের কান্না শুনেছি।
ধমক দিল অরবিন্দদা, ‘আমি কী একবারও বলেছি, তুই শুনিসনি? ওই তো বললাম, প্যাঁচা যদি সুর করে ডাকে তা মেয়েদের কান্নার মতো লাগে, তুই বুঝতেই পারবি না প্যাঁচা ডাকছে না মেয়ে কাঁদছে। (“দেড় ডজন আঁতেলের গল্প” – দীপ প্রকাশন)
আমাদের সকলের সাথেই এরকম ঘটনা কখনও না কখনও নিশ্চয়ই ঘটেছে – রাতের বেলা অনেকেরই মনে হতে পারে, ছাঁদে বুঝি কেউ হেঁটে চলে বেড়াচ্ছে। হঠাৎ ধপ করে কি যেন পড়ার আওয়াজ, দেখা গেল, জানালার ওপরের সানসেট থেকে একটা হুলোবেড়াল নীচে লাফ মেরে পড়ল। কখনও কেউ বাড়ির সকলে মিলে বা বন্ধুবান্ধবদের সাথে কোনও জায়গা থেকে গভীর রাতে বাড়ি ফিরতেই পারে । আর ফেরার সময় দূরের আলো-আঁধারি পথের পাশে দেখতেই পারে কেউ ধবধবে সাদা শাড়ি পড়ে দাঁড়িয়ে আছে। ভয়ে বিবর্ণ হওয়া অস্বাভাবিক নয়। সাহসী কেউ গিয়ে দেখতেই পারে, একটা ছেঁড়া সাদা কাপড় গাছে জড়ানো । হয়তো বা কেউ ফাজলামো করে জড়িয়ে রেখেছিল, নতুবা পাশের বাড়ি থেকে দমকা হাওয়ায় বাইরে রোদে শুকাতে দেওয়া কাপড় উড়ে এসে পড়েছে গাছে। ছোটবেলায় ঠাকুমার কাছ থেকে অনেকে তাদের দেশের বাড়ির কত সব অলৌকিক ঘটনা শুনতেই পারে। সত্যি মিথ্যে জানি নে। তবে, ভালো থাকলে, মন্দও থাকবে । ঠিক তেমনি, পজিটিভ এনার্জি থাকলে নেগেটিভও থাকতে হবে। তাই, ভৌতিক ব্যাপার নিয়ে অনেকে মস্করা করলেও তেনাদের অস্তিত্ব অস্বীকার করি কোন উপায়ে ?