‘চারুলতা’ সিনেমায় মাধবী মুখোপাধ্যায়ের যে দূরবীন দৃশ্য রয়েছে তা বাংলা সিনেমার অন্যতম সেরা আইকনিক দৃশ্য। চলচ্চিত্র প্রেমিক বাঙালিদের মধ্যে এমন বাঙালি বোধহয় হাতে গোনা যারা এ দৃশ্য দেখেননি । আজ সেই আইকনিক সিনেমার আইকনিক অভিনেত্রী ৮১-তে পদার্পন করলেন। তাঁর অভিনয়সত্ত্বার মধ্যে দিয়ে আমি এক আন্তর্জাতিক মানের অভিনেত্রীকে দেখতে পাই । মায়ের হাত ধরে থিয়েটারের দুনিয়ায় পা রেখেছিলেন তিনি। তখন অবশ্য তাঁর নাম ছিল মাধুরী। ট্যাক্সিভাড়া বেশি লাগবে বলে যে মেয়েটি সত্যজিৎ রায়ের সঙ্গে দেখা-ই করতে চাননি, পরবর্তীকালে তিনিই হয়ে উঠেছিলেন সত্যজিৎ রায়ের মহানগর, চারুলতা, কাপুরুষ নামক কালজয়ী সিনেমাগুলির নায়িকা। মৃণাল সেন, ঋত্বিক ঘটক, পূর্ণেন্দু পত্রীর মতো পরিচালকদের প্রথম পছন্দ ছিলেন তিনিই। ‘বাইশে শ্রাবণ ‘, ‘আজ – কাল – পরশু’ ছবিতে তাঁর অভিনয় দেখে মুগ্ধ হয়েছিলেন স্বয়ং সত্যজিৎ । তাঁর মধ্যে ছিল অভিনয়ের সহজাত গুন। তাঁর মৌখিক অভিব্যক্তি, চোখের গভীরতা, আপন ব্যক্তিত্ব – তাঁর প্রেমে, মোহে পড়তে বাধ্য করে। বড়পর্দার বাইরে ছোটপর্দাতেও তিনি কাজ করেছেন । সময় ও পরিস্থিতি কোনোটাই তাঁর ঘাড় নোয়াতে পারেনি। নিজের সিদ্ধান্তে সর্বদা থেকেছেন অটল। তিনি এক অসামান্য হৃদয়ের মানুষ। খুব ভালোবাসেন বই পড়তে। চারুলতা, বিন্দুর ছেলে, বনপলাশীর পদাবলী, মহানগরের মতো সাহিত্যধর্মী সিনেমাতেও তিনি অভিনয় করেছেন। রান্না করতে খুব ভালোবাসেন। ইলিশ তাঁর পছন্দের খাবার। আজও তাঁর গালের টোল পড়া হাসি ভুবন ভুলিয়ে দিতে পারে। নিছক নায়িকা হতে চাননি কোনোদিন। বাণিজিক ও সাহিত্যধর্মী ছবির একজন সফল অভিনেত্রী তিনি। আজও বাঙালির কাছে চারুলতা একজনই। আজও তিনি আপন তেজে আলোকিত, প্রশংসিত।