পুরনো এক বন্ধুর কথা

পুরনো এক বন্ধুর কথা

মেঘলা দুপুরে শুয়ে শুয়ে এপাশ আর ওপাশ করছিলাম। কিছুই ভালো লাগছিলো না। হঠাৎ করে কানে এলো স্ত্রীর গলা, “কী গো শুনছো, দেখো তো এই ফটো অ্যালবামটা। এর আগে কোনো দিন তো দেখিনি, কোথায় ছিল এতদিন? “
উঠে গিয়ে দেখলাম আর মন আনন্দে নেচে উঠলো। “কোথায় পেলে এটা?”
“এই তো ট্রাঙ্কে পড়ে ছিল। ছবির এই ছেলেটা কে গো?” খুব উৎসাহ মনে জিজ্ঞেস করল স্ত্রী।
“এ আমার ছোট বেলার সবথেকে প্রিয়, প্রাণের বন্ধু পরেশ গো। “
“কই কোনো দিনও দেখি নি তো!”
“দেখবে কী করে, ও তো বহু বছর আগে নিউজিল্যান্ড চলে গেছে।”
সত্যি হঠাৎ করে পুরনো কত স্মৃতি তাজা হয়ে উঠলো চোখের সামনে। সেই ছোট বেলা থেকে দুজনের বন্ধুত্ব, একেবারে হরিহর আত্মা যাকে বলে আর কী। দু মাসের ছোট বড়ো আমরা। স্কুল, কলেজ, সব ই একসাথে পথচলা আমাদের। মনে পড়ে যাচ্ছে সেই দিনগুলোর কথা যখন দিনের বেশির ভাগ সময়টাই আমরা কাটাতাম একসাথে। একসাথে পড়া, খেলা, খাওয়া-দাওয়া, ঘুরতে যাওয়া, স্কুল পালানো, কলেজ পালিয়ে সিনেমা দেখতে যাওয়া, প্রথম সিগারেটে টান দেওয়া, রাতের পর রাত জেগে আড্ডা মারা, প্রথম প্রেমপত্রে হাতেখড়ি সবই করেছি আমরা একসাথে। মনে পড়ছে একে ওপরের জন্য লড়াই করে যাবার প্রবণতা। সত্যি কী সুবর্ণ সময় ছিল সেই দিনগুলো। মা বাবারাও আমরা একসাথে থাকলে নিশ্চিন্ত থাকতো। পাড়া প্রতিবেশীরা বলত আমি আর পরেশ নিশ্চয়ই গতজন্মে ভাই ছিলাম। তাই ওদের এতো টান। কিন্তু কালের নিয়মে সবই প্রবহমান। তাই হয়তো সেই বন্ধুত্ব আজ আর অটুট নেই। কর্মসূত্রে আজ তাকে চলে যেতে হয়েছে অনেক দূরে। এছাড়া পারিপার্শ্বিক বিবিধ কারণে আজ বন্ধুত্বের আগল অনেকখানি আলগা হয়েছে। যোগাযোগও নেই। বহু বন্ধুত্বের পরিণতি এরকমই হয়। কিছুই চিরস্থায়ী নয়। কিন্তু এই যে টান, এই যে আত্মিক সম্পর্ক কোনো দিন ভোলার নয়। এই সম্পর্ক চিরকালীন। আজ হঠাৎ পুরনো অ্যালবামে বন্ধুর ছবি দেখে অতীতের স্মৃতির গলিতে পরেশের সাথে পা রেখে মনে সত্যি ক্ষণিকের জন্য হলেও কিশোর বয়সের প্রাণোচ্ছলতা অনুভব করলাম।