বসন্তের সঙ্গে হাত মিলিয়ে এসেছে প্রেমের মরসুম। চকলেট ডে, টেডি ডে, হাগ ডে, প্রমিস ডে তে গা ভাসিয়েছে আজকের প্রজন্ম। ব্যাপারটা মন্দ নয়। ভালোবাসার মানুষটিকে যদি একটু বেশি খুশি করা যায় মন্দ কী। তবে আজকাল এসব দেখে মনের ভিতরটা হু হু করে ওঠে মানসী কাকিমার জন্য। দু বছর হলো তার স্বামী পরিতোষ কাকু মারা গেছেন। স্বামীর অভাবটা আজকাল বড়ো বেশি অনুভব করেন। ছেলে, ছেলের বৌ, নাতি ছিল এতদিন, তাও কোনোভাবে কাটছিলো। কিন্তু তারাও চলে গেলো পুনেতে কর্মসূত্রে। পুরো ফাঁকা হয়ে গেলো মানসী কাকিমার ভরপুর সংসার। বৌমা সৌমিলিই বিয়ের প্রথম বছরে মানসী কাকিমাকে বললো -“মা, বাবা আর তুমি কোনোদিন ভ্যালেন্টাইন্স ডে পালন করেছো?”
“কী যে বলিস পাগলের মতো, আমাদের সময়ে এসব ছিলো না” হেসে উত্তর দিয়েছিলেন কাকিমা।
সেবার বৌমার জোরাজুরিতে কাকিমা ভ্যালেন্টাইন্স ডের দিন স্বামীর সাথে ক্যান্ডেল লাইট ডিনার করেছিলেন এক রেস্টুরেন্টে। ব্যবস্থা সব সৌমিলি করেছিল। যুবক- যুবতীদের মাঝে খানিক অস্বস্তি বোধ হয়েছিল ঠিকই কিন্তু কাকু-কাকিমার কাছে সেই মুহূর্ত গুলো সত্যি স্পেশাল ছিল। সেদিন ওদের দেখে মনে হয়েছিল যেন আবার নতুন করে নিজেদেরকে চেনার পর্ব শুরু। মনে হয়েছিল এবার থেকে যদি প্রতি বছর এই বয়স্ক কাপল ভালোবাসা এই ভাবেই উদযাপন করেন, ভালোই তো! কিন্তু ভাগ্যের অদ্ভুত পরিহাস, আজ কাকু নেই। আজ মানসী কাকিমা বড়ো একা, স্বামীর সঙ্গে কাটানো আজকের দিনটি নিশ্চয়ই খুব বেশি করে মনে পড়ছে তার।
সত্যি এইরকম না জানি কত মানুষ আজ বড়ো একা, তাদের মনের মানুষ অজানা যাত্রাপথের একাকী যাত্রী। তাই বার বার মনে হচ্ছে ভালোবাসা যা অসীম অনন্ত তা যেন এই নিঃসঙ্গ মানুষ গুলোর মনকে চির বসন্তের রঙে আচ্ছাদিত করে। বিচ্ছেদের সব যন্ত্রণাকে ভুলিয়ে দেয়, আর সীমাহীন প্রেমের শুভ্রতায় হৃদয়কে ভরিয়ে রাখে।