আজ কাল ট্রেনে বাসে যাত্রা করার সময়ে একটা জিনিস চোখে পড়ে, সকলেই প্রায় তাদের মোবাইল ফোনে মুখ গুঁজে থাকে। এমনকি যাদের বিশেষ কোনো কাজ নেই, তারাও মোবাইল-এ ব্যস্ত। আবার অনেক ক্ষেত্রে লক্ষ্য করেছি মা বাবা নিজেরা নিশ্চিন্তে কাজ করবে বলে তাদের ছোট্ট শিশুর হাতে মোবাইল দিয়ে বসিয়ে দিয়েছে। তাই দেখে মনে হয় বর্তমান সভ্যতা এক যান্ত্রিক সভ্যতায় পরিণত হয়েছে। সকালে ঘুম থেকে ওঠা থেকে রাতে ঘুমোতে যাবার আগের সিংহভাগই আমরা যন্ত্র দ্বারা চালিত হচ্ছি। অফিসের কম্পিউটার-এ তো কাজ হলো, কিন্তু তারপরও মোবাইল-এ গেম খেলা, ভিডিও দেখা, কারো সঙ্গে দু-দন্ড কথা বলার জো নেই। এমনকি এই স্বভাবের ফলে দুর্ঘটনা ঘটে চলছে অনেক সময়ে। আগের সেই কাজ শেষে বাড়ি ফিরে সান্ধ্যকালীন আড্ডা এখন মনে হয় নিছক কাল্পনিক। বা সহযাত্রীর সাথে গত রাতের ক্রিকেট ম্যাচ নিয়ে বিস্তর বাগবিতন্ডা, বা প্রিয় লেখকের সদ্য পড়া উপন্যাস নিয়ে একটু আলোচনা এখন আর খুব সহজ নয়। এখন সেই সময় দখল করেছে ইউটিউবের বিভিন্ন টক্ শো, মেগা সিরিয়াল, কমেডি প্রোগ্রাম ইত্যাদি। এই ভাবে পারস্পরিক আন্তরিকতা, মেলামেশা দিনে দিনে কমে যাচ্ছে। সুখ-দুঃখ ভাগ করে নেওয়া এসব মূল্যবোধ গড়ে উঠছে না। একাকিত্বের নির্মম কামড়ে মেন্টাল হেলথ বিপর্যস্ত হচ্ছে। শুধু মানসিক দিক থেকে নয় শারীরিক দিক থেকেও ক্ষতি হচ্ছে অনেক। যন্ত্রের জয়যাত্রার যুগে মানুষ হয়ে উঠছে অলস। তার কাজ করার ইচ্ছা এবং ক্ষমতা সবই হারিয়ে যাচ্ছে। শারীরিক শ্রমের অভাবের কারণে দেহে বাসা বাঁধছে নানা রোগ। মানুষে মানুষে সম্পর্কগুলো যেন বড়ো মেকি হয়ে যাচ্ছে। কমে আসছে আত্মিক টান। যন্ত্র দানবের যুগে হারিয়ে গেছে হাসি-ঠাট্টা-মজার দিনগুলি। আধুনিক যন্ত্রাদি গ্রাস করেছে সম্পর্কের সারল্যকে । ভালোবাসার রাজত্বে গড়ে উঠেছে হিংসা, দ্বেষ, হানাহানি। জন্ম দিয়েছে এক নবসভ্যতার। নিষ্ঠুর, সর্বগ্রাসী, খাঁচায় বন্দি যান্ত্রিক সভ্যতার।