বাঙালি মাত্রই ভোজন ও……

বাঙালি মাত্রই ভোজন ও……

বাঙালি মাত্রই ভোজন ও ভ্রমণ রসিক। এই জাতির রসনাতৃপ্তির কথা কারো অজানা নয়। বাঙালীর প্রতিটা পার্বণ, প্রতিটা উৎসব, প্রতিটা ঋতুর সাথে স্বাদও পরিবর্তিত হতে থাকে। আর শীতকাল হলো এর সবচেয়ে আদর্শ সময়। খাবারের সঙ্গে যেন বাঙালির নস্টালজিয়া জড়িয়ে রয়েছে। ছোট বেলায় মা ঠাকুমা দিদিমার হাতের জাদুতে বিভিন্ন পদ পরিবেশিত হতো থালায়। থাকতো গুড়ের পায়েস, পাটিসাপটা, গোকুল পিঠে, দুধ পুলি আরো কত কি, গন্ধে ম ম করতো রান্নাঘর। পাটালি গুড়, নলেন গুড়, খেজুরের রসের মাদকতায় আচ্ছন্ন হতো মন এবং পেট। পৌষের আগমনের সঙ্গে সঙ্গে হরেক রকম খাবার তার পসরা সাজিয়ে উপস্থিত হতো পাতে। বাহারি সবজির রকমারি পদ – এ যেন বাঙালি রসনায় অনেকখানি পাওয়া। সময় যতই এগোক না কেন এসবের টান কখনোই কমবে না। শীতের আমেজে খাওয়াটা যেমন জমে ওঠে, তেমন জমে ওঠে ঘুরতে যাওয়া। মনে পড়ে যায় ছেলে বেলায় বন্ধুদের সাথে পিকনিক, সে এক ধুন্ধুমার কান্ড! পুরো পিকনিকের প্ল্যান, খাবার খসড়া তৈরী, তারপর পুরো টীম মিলে বাজার, রান্না, খাওয়া-দাওয়া। খুব হৈ হুল্লোড়! কখনো সদলবলে কখনো আবার একাকী, বাঙালি এই সময়ে আর গৃহবন্দি থাকতে চায় না। প্রায় সারা বছর ধরেই যে প্রাণনাশী গরমের দাবদাহ চলে শীতে তার থেকে রেহাই, ফলে চলো বাঙালি চলো। অনলাইন বুকিং থেকে শুরু করে পাড়ার পুরোনো বন্ধুদের সাথে চড়ুইভাতি করা চাই-ই চাই। দার্জিলিঙের পর্বত বাহার বা পুরীর সমুদ্রতট, ভ্রমণ পিপাসু বাঙালির মন ছুটে যায় কোনো নৈসর্গিক পরিবেশে যেখানে নেই কোনো ডেডলাইন নেই কোনো রোজকার ব্যস্ত জীবনের একঘেয়েমি। চলে আড্ডা, খাওয়া-দাওয়া, পছন্দের দৃশ্যকে ফ্রেম বন্দি করা, ইত্যাদি।
যুগ পাল্টেছে, সময়ের অভাবে আজ কিনে খেতে হচ্ছে মা মাসিমার পিঠে-পুলি, বা ওয়াটসাপ গ্রুপে প্ল্যান হচ্ছে বেড়াতে যাবার, কিন্তু শীতকালীন আহারে বিহারে বাঙালি আজও অপরাজেয়, অদ্বিতীয়।