শৈশবে দাদু ঠাকুমার সঙ্গে কাটানো দিনগুলো চিরজীবন আমাদের মনে অমলিন হয়ে থাকে। তাদের স্পর্শ, হাসি, কথা এমনকি গায়ের গন্ধও যেন আমাদেরকে আষ্টে পিষ্টে রাখে। তাদের অকৃত্রিম স্নেহ শৈশবের রক্ষাকবজ, সেই জন্যই বাবা মার শাসন থেকে বাঁচার একমাত্র নিরাপদ আশ্রয় হল দাদু ঠাকুমা। দাদুর হাত ধরে পার্কে ঘুরতে যাওয়া, ছোটবেলায় ঠাকুমার কাছে রূপকথার গল্প শোনা, লুকিয়ে লুকিয়ে ঠাকুমার তৈরী আচার খাওয়া – এসব মধুর স্মৃতির আস্বাদ যারা পেয়েছে তারাই জানে এর মূল্য।
বর্তমান প্রজন্মের অনেক শিশুই এই সুখ, এই শান্তি, এই আদর থেকে বঞ্চিত। এখনকার নিউক্লিয়ার ফ্যামিলি এর জন্য মূলত দায়ী। যৌথ পরিবারগুলো ভেঙে ছোট ছোট পরিবারে পরিণত হচ্ছে। সেখানে দাদু – ঠাকুমা, কাকা –জ্যাঠা, পিসি এদের অনুপস্থিতিতে বাঁচা এই সম্পর্কগুলোর মূল্য বুঝতে শেখায় না। ছোটদের জীবন কেবল বাবা মায়ের মধ্যেই আবর্তিত হয়। তার ওপর রয়েছে পড়াশুনার অসম্ভব চাপ, ফলে তার মানসিক বিকাশ অনেকটাই ব্যাহত হয়। দাদু ঠাকুরমার সঙ্গে যে শিশুরা থাকে তাদের মধ্যে মূল্যবোধ, সহণশীলতা, দায়িত্ববোধ, বয়স্কদের প্রতি শ্রদ্ধাশীল মনোভাব অতি সহজেই গড়ে ওঠে। সেগুলো তাদের প্রতি জোর করে আরোপিত করতে হয় না। কিন্তু বর্তমান প্রজন্মের কাছে এই মানবিক অনুভূতির থেকে তাদের ক্যারিয়ার, স্বাধীনভাবে নিজের মতো করে বাঁচা অনেক বেশি প্রাধান্য পায়। এর ফলস্বরূপ তাদের ছেলেমেয়েরাও বাড়ির বয়স্কদের স্নেহের পরশ থেকে বঞ্চিত হয়। আমাদের ছোটবেলার যে সময়গুলো দাদু ঠাকুমা দিদিমার সাহচর্যে গড়ে উঠেছিল, বর্তমান যুগে সেই সময়ইগুলো মোবাইল, টি.ভি, ল্যাপটপে অতিবাহিত হয়। তাতে সুফলের থেকে কুফলটাই বেশি হয়। দাদু ঠাকুমা থাকলে এই অভাব গুলো অতি সহজেই পূরণ করা যায় এবং বৃদ্ধ বয়সে তারাও একাকিত্ব থেকে মুক্তি পায়। তাই এই প্রজন্মকে খুবই হতভাগ্য বলে মনে হয়। যারা বাড়ির বয়স্কদের সান্নিধ্য, আদর পেয়েছে শুধু তারাই জানে তারা কত ভাগ্যবান।