‘বন্ধু মানে একটু কাছে আসা, বন্ধু মানে হাতে হাত রাখা ‘
সত্যি তো, বন্ধুত্ব হলো এমন এক সম্পর্ক, এমন এক আবেগ যা শুধু প্রাণের বন্ধুর সাথেই শেয়ার করা যায়, সেই বোঝে।
প্রথম প্রেম থেকে শুরু করে প্রথম স্যালারি পাওয়ার আনন্দ, আবার হৃদয় ভঙ্গের জ্বালা, রিজেকশন এর বেদনা, স্বপ্ন পূরণের বাঁধ না মানা উচ্ছ্বাস সব কিছু বন্ধুকে বলে ফেলা যায় অনায়াসে। এক্ষেত্রে ধনী-গরিব ছোট-বড়ো কোনো কিছু বন্ধুত্বের মাপকাঠি হতে পারে না। যার সাথে মনের মিল হয় সেই আমাদের বন্ধু হতে পারে। কিন্তু আজও এই পবিত্র সম্পর্ক সমাজের বিধি-নিষেধ থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত হতে পারেনি। পাড়ায়, স্কুলে, কলেজে, বিশ্ববিদ্যালয়ে, কর্মক্ষেত্রে তৃতীয় লিঙ্গের মানুষদের দেখতে পাই। তারা কোথাও আমাদের প্রতিবেশী, কোথাও সহকর্মী রূপে পাশাপাশি থাকে, কিন্তু আমাদের মধ্যে অনেকেই ওদের দিকে বন্ধুত্বের হাত বাড়িয়ে দিই না। এমনকি শিক্ষিত সচেতন মানুষও ‘লোকে কি বলবে’ এই ভাবনায় আচ্ছন্ন হয়ে কোনো কারণ ছাড়াই তৃতীয় লিঙ্গের মানুষগুলোকে দূরে সরিয়ে দেয়। সমাজের যত বস্তাপচা, জীর্ণ মানসিকতা সমালোচকদের গ্রাস করে। এদিকে অনেকেই মুখে আমরা সব সময় আধুনিকতার বুলি আওড়াই। আধুনিকতা কি পোশাক-আশাক, লাইফস্টাইল এর ওপর নির্ভর করে, মোটেই না, বরং আমাদের চিন্তাধারা, যুক্তিবাদী মন আমাদের আধুনিক বানায়। আমাদের মধ্যে যারা মানুষগুলোকে অস্বাভাবিক বলে দূরে সরিয়ে রাখি, অস্বাভাবিক তারা নয়, আমাদের চিন্তাধারাই স্বাভাবিক নয়। স্ত্রী পুরুষের মতো তারাও যে প্রকৃতিরই সৃষ্টি এটা মেনে নিতে কোথাও যেন কষ্ট হয়! বন্ধু হতে গেলে ছেলে মেয়ে, তার শারীরিক গড়ন এগুলো কোনোটাই কারণ হতে পারে না। যে বিপদের সময় হাত টা ধরবে সেই তো প্রকৃত বন্ধু। তাই মনকে উন্মুক্ত করে তাদেরকে নিজেদের মাঝে সামিল করুন। আসলে যে মানুষ নিজে দুঃখকে প্রত্যক্ষ করে, যে কঠিন জীবন সংগ্রামের মাঝে এগিয়ে চলে জীবনযাত্রা অব্যাহত রাখে সে ই দুর্দিনে আমাদের পাশে দাঁড়াতে পারে। সে ই বলতে পারে, ‘বন্ধু আমি তোমার পাশে আছি, চিন্তা করো না’। তাই তৃতীয় লিঙ্গের মানুষদের যদি দূরে না ঠেলে তাদের প্রতি সম্মানের হাত বাড়িয়ে দেওয়া যায় তাহলে সেই সম্পর্কই আমাদের জীবনের মূল্যবান সম্পদ হয়ে উঠবে।