সকাল শুরু হবে এক কাপ গরম চায়ের পেয়ালায় চুমুক দিয়ে, এই সুখের সঙ্গে কোনো রকম কম্প্রোমাইজ হবে না কখনো। সারাদিনের কাজের উদ্যম জুগিয়ে দিতে যথেষ্ট এক পেয়ালা চা। কাজের ফাঁকে, আড্ডায়, চিন্তায়, উল্লাসে, সুখে দুঃখে, ব্যস্ততায় চায়ের জুড়ি মেলা ভার । যেই চা আমাদের গোটা জীবন জুড়ে সেই চা শ্রমিকদের জীবন, তাদের বেঁচে থাকা কিছু নিয়ে কি আমরা বিন্দুমাত্র চিন্তিত? না, কেউ না। তাদের জীবন সংগ্রাম যেন তাদের নিজের। তাদের দুঃখ, না পাওয়ার বেদনা, অর্ধাহার, অনাহার সবই যেন তাদের একার। সুখের ভাগটুকু তারা তুলে দেয় আমাদের হাতে। জন্ম থেকেই তাদের দুঃখ যেন বিধাতার লিখন হিসাবে উত্তরাধিকার সূত্রে নিয়ে আসে। শিশু বয়স থেকেই শুরু হয় তাদের প্রবল জীবন যুদ্ধ। না পায় শিক্ষা, না পায় নূন্যতম স্বাস্থ্য পরিষেবা। মা সহ শিশু অপুষ্টিতে ভোগে। বাসস্থান বলতে কোনো রকমে মাথা গোঁজার একখানা ঠাঁই। খাবার জোটে আধপেটা। অথচ কাজের সময়ের ক্ষেত্রে কোনো ফাঁকি দিলে চলবে না। আট ঘন্টারও বেশি সময় ধরে তারা কাজ করে। পায় অতি নিম্ন মজুরি। তার ওপর রয়েছে নানা রকমের রোগ ভোগ। খাটতে খাটতে জীবন কাটানো এ যেন তাদের ভবিতব্য। এদিকে আবার বন্য হিংস্র জন্তুদের প্রায়শই আক্রমণ। সরকার এদের দিকে তাকায় না, স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলোর পদক্ষেপ তথৈবচ। সাধারণ মানুষের এদের কঠোর জীবনযাত্রা সম্বন্ধে প্রায় কোনো সঠিক ধারণা নেই।
চা বাগানের মনোরম ছবি তোলা যতটা সুন্দর, চা শ্রমিকদের জীবনের ছবিটা ততটাই নিদারুণ। এই মর্মান্তিক বাস্তবের বদল করতে আমাদের সবাইকে সর্বাঙ্গীন চেষ্টা করতে হবে, তবেই হয়তো আমাদের চায়ের পেয়ালার আনন্দসুখের চুমুক সার্থকতা পাবে। চায়ের প্রতিটি চুমুক যেন হয়ে ওঠে শান্তির, কারো রক্তজল করা বেদনার নয়।