ওদের অসহায় শীর্ণকায় বলিরেখা ভরা মুখগুলো চেয়ে থাকে খোলা আকাশের দিকে, নেই কাজ, নেই রোজগার, নেই শ্রদ্ধা, নেই যত্ন, কি ভবিষৎ!
পাহাড়ের কোলে লালিত হওয়া চা বাগানের দৃশ্য বড়োই মনোমুগ্ধকর। সবুজের এই সমারোহ চোখকে দেয় শীতলতা, মনকে দেয় শান্তি। কিন্তু যাদের হাতে হয় এই লালন, যারা দিন-রাত এক করে ক্রমে ক্রমে গড়ে তোলে এই বিলাসী টি এস্টেট, তারা জীবনের শেষ সময় কোথায় যেন হারিয়ে যায়! কি হয় তাদের! যে বৃদ্ধ -বৃদ্ধা মানুষগুলো তাদের জীবনের মূল্যবান সময় দেয় এই চা শিল্পে সেই শ্রমিকদের কোনো মূল্য নেই চা মালিকদের কাছে। তারা এই অর্থকরী ফসলটিকে সযত্নে পরিচর্যা করে, কিন্তু তাদের জীবন কাটে অন্ধকারে। ভোগ করতে হয় নরক যন্ত্রণা। বৃদ্ধারা বিভিন্ন মহিলা সংক্রান্ত রোগে আক্রান্ত হন, এছাড়া অপুষ্টি হলো উপরি পাওনা। বার্ধক্যজনিত রোগও রয়েছে এর সঙ্গে। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে কমে যায় কর্মক্ষমতা। বয়স্ক শরীরটাকে টেনেটুনে কাজ করতে বাধ্য হয়। অভাব অনটনের সংসারে আরো টান পড়ে তাদের। আধপেটা খেয়ে জীবন চলে। প্রাপ্য প্রভিডেন্ট ফান্ড পান না, কোনো কোনো ক্ষেত্রে এক পয়সা গ্রাচুইটি দেওয়া হয় না, পেনশন বা বার্ধক্যভাতার ব্যবস্থা করা হয় না। ঘর, বাড়ি বিদ্যুৎ সংযোগ তো নেই, নূন্যতম স্বাস্থ্য পরিষেবাও পায় না। কিন্তু শুধু শারীরিক যন্ত্রনা নয়, মানসিক ব্যাধিও দানা বাঁধে মনে। দীর্ঘ দিন কাজ করার পর যখন শরীর আর আগের মতো শক্ত নেই, প্রাণশক্তি প্রায় তলানিতে এসে ঠেকেছে, তখন কাজের মানুষের তালিকা থেকে তারা বঞ্চিত, নিতান্ত বাতিল। ফলে মনে তো হতেই পারে, বাঁচার তাগিদটাই হারিয়ে গেছে।
দাসত্বের নির্জীব শ্রমযন্ত্র চা বাগানের বৃদ্ধরা। তাদের নিয়ে মালিক, সরকার, প্রশাসন কারো কোনো হেলদোল নেই। কিন্তু এই অবিচার বন্ধ হওয়া দরকার। বৃদ্ধ মানুষগুলোর অধিকার সংরক্ষণ করতেই হবে, তাহলেই তারা সারাজীবনের শ্রমের সঠিক মূল্য পাবে।