ট্রেনে, বাসে বা সিগনালে অনেক সময়ে আমরা থার্ড জেন্ডারের মানুষদের বিভিন্ন অঙ্গভঙ্গি করে ভিক্ষাবৃত্তি করতে দেখি, হ্যাঁ এই ভিক্ষাবৃত্তি যা হয়তো অনেকেই আমরা মনে-প্রাণে ঘৃণা করি, কিন্তু থার্ড জেন্ডারের মানুষদের কাছে এইটাই একমাত্র জীবিকা। সমাজের একাংশ যখন তাদের মেনে নিতে কুন্ঠা বোধ করে, তখন পেট চালাবার জন্য হাত পাততেই হয়।
ওদের নেই কোনো শিক্ষা, নেই কোনো প্রশিক্ষণ, ফলে ভিক্ষাবৃত্তিই ওদের শেষ অবলম্বন। কোনো ছোট-খাটো সংস্থায় কাজ পেলেও দেখা গেছে বেতন অতি নগণ্য, বা অনেক সময় সেটাও ঠিক মতো দেওয়াই হয়না। তার ওপর চলে অপমান-অবিচার।কিন্তু এই ভিক্ষা করেই বা কতটুকু রোজগার, কোনোদিন একটু বেশি আবার কোনো দিন খুবই সামান্য, তখন প্রায় অভুক্ত থেকেই দিন চলে। পরের দিন আবার নিজের অতি-পরিচিত জায়গায় দাঁড়িয়ে থেকে হাত পাতা। তার সাথে চলে দৈনন্দিন হয়রানি, ফলে বুকের যন্ত্রনা বুকে নিয়েই চলে ভিক্ষা। যদিও বর্তমানে বিভিন্ন শিক্ষা ও কাজের ক্ষেত্রে তৃতীয় লিঙ্গের মানুষের জন্য আলাদা সুযোগ-সুবিধা হচ্ছে আর পাঁচ জনের মতো মাথা উঁচু করে বাঁচার, কিন্তু সবাই এই সুবিধা ভোগ করতে পারেনা। যদিও বা তারা উপরোক্ত ক্ষেত্রগুলোতে প্রবেশ করে সেখানে অনেক সময়ে শুনতে হয় মানুষের কটূক্তি, বিদ্রুপ, কপালে জোটে লাঞ্ছনা, গঞ্জনা যা এক এক সময় সহ্যসীমা অতিক্রম করে যায়। তাদেরকে এক প্রকার বাধ্য করা হয় সরে যেতে। সেক্ষেত্রেও ভিক্ষাবৃত্তি হয়ে দাঁড়ায় তাদের একমাত্র আশ্রয়।
পরিবার যেখানে তাদের পাশে দাঁড়ায় না, আত্মীয়-স্বজনও সরে থাকে, তাদেরকে অনিশ্চিয়তার পথে ছেড়ে দেয় লোকলজ্জার ভয়ে সেখানে বৃহত্তর জগতের কাছে সহানুভূতি আশা করা আরো কঠিন ব্যাপার। তাই চাই চিন্তাভাবনার পরিবর্তন। সমাজের প্রতিটি মানুষকে হতে হবে সহানুভূতিশীল, সরকারের ও NGO গুলোর উচিত বিভিন্ন বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ গুলোতে তাদের নিযুক্ত করে কর্মোপযোগী করে তোলা। যারা শিক্ষিত তাদের চাকরিতে নিয়োগের ব্যবস্থা করা, স্বনির্ভর করে তোলা। তাহলে তৃতীয় লিঙ্গের মানুষের চলার পথ খানিক সুগম হবে, তারা তাদের মৌলিক অধিকারগুলো ভোগ করতে পারবে, পারবে সম্মানের জীবনযাপন করতে। যদি তাদের যথোপযুক্ত জীবিকা নির্বাহে যুক্ত করা যায় তবেই তাদের মধ্যে ভিক্ষাবৃত্তির প্রবণতা কমবে এবং তাদের সমাজের মূলস্রোতে নিয়ে আসা যাবে। মনে রাখতে হবে সমাজের একটা অংশ জুড়ে আছে এই তৃতীয় লিঙ্গের মানুষগুলো। তাই তাদেরকে পদপিষ্ট করে কিছুতেই সমাজ ও দেশ এগিয়ে যেতে পারবে না।