” কনকনে শীত তাই
চাই তার দস্তানা;
বাজার ঘুরিয়ে দেখে,
জিনিসটা সস্তা না।”
উপরের পংক্তিগুলো রবি ঠাকুরের লেখা নিছক একটি মজার কবিতা হলেও শীতের আবহের একটি বাস্তব দিক এটি। আমাদের আশেপাশে এমন বহু মানুষ আছে যারা তাদের শীত নিবারণের জন্য যথোপযোগী একটি পোশাক কেনারও ক্ষমতা রাখে না। শীতের আমেজে যখন মানুষ মজেছে, চারিদিকে বনভোজন, ঘুরতে যাবার হিড়িক, পিঠে পার্বণ রসনাতে ডুব দিয়েছে সেই সময় অন্য এক করুণ চিত্র দেখা যায় আমাদের চারপাশে। গ্রীষ্মের ক্ষিপ্র দাবদাহ না থাকার ফলে যখন আমরা হাঁফ ছেড়ে বাঁচি তখন কিন্তু এই হতদরিদ্র মানুষগুলোর কাছে এই আরামদায়ক শীত মারণ যন্ত্রণা ছাড়া আর কিছুই না। উষ্ণতা কমার সাথে সাথে মানুষগুলোর মাথায় ভাঁজ পড়ে কারণ মাস কয়েকের জন্য শীতের উগ্রতা তাদের সহ্য করতে হবে। সবচেয়ে দুর্বিপাকে পড়তে হয় শিশু ও বৃদ্ধদের। তাদের সহনক্ষমতা কম হবার ফলে তারা রোগাক্রান্ত হয়। ছোট শিশুর শীতবস্ত্র, প্রয়োজনীয় ওষুধ জোগাড় করতে অপারগ হয় পিতা – মাতারা। বৃদ্ধদের চিকিৎসা না করাতে পেরে পরিবারকে তার মৃত্যু পর্যন্ত দেখতে হয় চোখের সামনে। পাহাড়ি অঞ্চলের দরিদ্র মানুষদের অবস্থা হয় আরো সঙ্গীন। বাসযোগ্য নয় এমন অবস্থায় যাদের সংসার যাপন করতে হয় শীতকাল তাদের কাছে আরো দুশ্চিন্তা বয়ে আনে। শীতের কামড়ের হিংস্র রূপটাই কেবল উপলব্ধি করে সেই মানুষগুলো। আনন্দ-আহ্লাদ তাদের কাছে আতিশয্যের ব্যাপার। মাথার ওপরে কারো ছাদ নেই, কারো ছাদ থাকলে পেটে খাবার নেই, আর যদি বা দু মুঠো খাবার জোগাড় করতে পারে তাহলে শীতের কোনো আবরণ নেই। আমরা যদি প্রত্যেকে এরকম মানুষদের শীত নিবারণের খানিক প্রচেষ্টা করি তাহলে সেই মানুষগুলোর মুখে একটু হাসি ফোটাতে সমর্থ হবো এবং তাদের হাসি আমাদের মনকে তৃপ্ত করবে।