শুধু জ্ঞান বৃদ্ধির জন্য নয়, কাজে মন না বসলে মনকে কেন্দ্রীভূত করার জন্য আমার সবথেকে পছন্দের স্থান হলো বইঘর অর্থাৎ লাইব্রেরি। আমার মতো আপনারাও সেখানে পান এক মানসিক মুক্তির আস্বাদ। লাইব্রেরির শান্ত পরিবেশে একান্তে নিভৃতে জ্ঞান সমুদ্রে নিমজ্জিত হওয়ার মধ্যে রয়েছে এক অনাবিল আনন্দ। বইঘরে বসে বই পড়ার মধ্যে যে অনুভূতি পাওয়া যায়, তা আর অন্য কোথাও নেই। বইঘর এমন একটি স্থান যেখানে হৃদয় ও পৃথিবী উভয়ের দরজাই খুলে যায়। মননশীলতা চর্চার জন্য গ্রন্থাগারের কোন বিকল্প নেই। বইঘর বা লাইব্রেরি মানবসভ্যতায় এসেছে অনেক পরে। কিন্তু এই বইঘর এলো কি করে? সেটা মূলত লিখিত তথ্য সঞ্চয়ের জন্য, যা ভবিষ্যতে কাজে লাগবে। ছ-হাজার বছর আগে ব্যাবিলনে সুমেরীয় সভ্যতায় মাটির খণ্ডে একাধিক তিরের ফলার মতো চিহ্ন পোষা প্রাণীদের কেনাবেচার হিসেব রক্ষার ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হতো। পরে মানুষ পুঁথি লিখতে শুরু করলে তাতে জ্ঞান সঞ্চিত করে রাখার ব্যবস্থা হল।আরো পরে মুদ্রণ প্রযুক্তি শুরু হওয়াতে তথ্য ছাপানোয় সুবিধা হলো।
শস্য ভাণ্ডারের মতো গ্রন্থাগারে জ্ঞান জমা করে রাখা হয় তাই এ হলো জ্ঞানের ভান্ডার। জ্ঞান অর্জন, গবেষণা, চেতনা ও মূল্যবোধের বিকাশ, সংস্কৃতিচর্চা ইত্যাদির মাধ্যমে মানুষকে আলোকিত করে তুলতে লাইব্রেরির কোনো বিকল্প নেই। এশিয়াটিক সোসাইটি, ন্যাশনাল লাইব্রেরি, জয়কৃষ্ণ পাঠাগার থেকে শুরু করে পাড়ার ছোট্ট গ্রন্থাগারটিতেও বই পাগল মানুষের ভিড় জমে, চলে পছন্দের বইয়ের খোঁজ, পাতার পর পাতা ওল্টানো, এক বই পড়ার পরামর্শ আরেক জনকে দেওয়া – বই পড়াই হলো পারস্পরিক আদান-প্রদানের মূল আধার। তবে এখন আধুনিক প্রযুক্তির যুগে বইঘরের চেহারা পাল্টে গেছে, এখন ইন্টারনেটের দৌলতে আমাদের মোবাইলেই আছে এক বিশাল লাইব্রেরি সুতরাং পড়ার কায়দার পরিবর্তন হলেও বই পড়া বন্ধ হবে না।
সত্যি তো, বইয়ের থেকে ঘনিষ্ট ও নিরাপদ বন্ধু আর কোনো কিছুই হতে পারে না, এ আমার অকপট স্বীকারোক্তি।