চা শিল্পে যন্ত্রের ব্যবহার কম থাকায় একে বলা হয় শ্রমনিবিড় শিল্প। তাই এই শিল্পের জন্য প্রয়োজন হয় প্রচুর পরিমানে শ্রমিক। কিন্তু চা বাগানে কর্মরত শ্রমিকরা চিরকাল বঞ্চনার শিকার। পাহাড় ও পাহাড় সংলগ্ন অঞ্চলে অসংগঠিত এই শ্রমিকরা কাজ করে চলে অসুরক্ষিত, অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে। সারাদিন বাগানে পাতা তুলতে গিয়ে তারা বিভিন্ন ধরণের পোকা মাকড়ের আক্রমণের শিকার তো হয়ই। তীব্র রোদে পুড়ে, বৃষ্টিতে ভিজে, কাজ করার কারণে প্রায় সকলেই চর্মরোগে আক্রান্ত হয়। চিকিৎসাকেন্দ্রে গেলে কোনো রকমে প্রাথমিকভাবে দেখে তাদের ফিরিয়ে দেওয়া হয়। প্রতিটি নারীশ্রমিক বয়ঃসন্ধিকালে ও গর্ভাবস্থায় নানা ধরণের সমস্যায় ভোগেন, কিন্তু চিকিৎসা পায়না। নিয়মিত চিকিৎসা ব্যবস্থার কোনো সুবিধা না থাকার জন্য প্রজনন স্বাস্থ্য নিয়েও তাদের সমস্যায় পড়তে হয়। এদিকে চরম দারিদ্রতার কারণে অন্য কোথাও থেকে চিকিৎসা করানো তাদের পক্ষে সম্ভব হয় না। প্রায় ৭৫ শতাংশের বেশি চা শ্রমিক ভগ্ন স্বাস্থ্য নিয়েও কাজ করে যান। মাংসপেশির ব্যথা নিয়েও কাজ করেন প্রায় ৭৩ শতাংশের ওপর শ্রমিক। আর ঘাড় ও পিঠের ব্যথা হয় প্রায় ৭৫ শতাংশ চা শ্রমিকদের। অথচ বাগান মালিকরা শ্রমিকদের কম মজুরি দিয়ে যে বাড়তি সুযোগ সুবিধা দেওয়ার কথা বলেন তার একটি হলো বিনামূল্যে চিকিৎসা কিন্তু বাস্তবে যার নামমাত্র পাওয়া যায় না। যে শ্রমিকদের পরিশ্রমের ফসল হিসাবে মালিকপক্ষ, সরকার, ট্রেড ইউনিয়নগুলোর কোষাগার পূর্ণ হয়ে উঠছে তারা শ্রমিকদের স্বার্থ ও স্বাস্থ্য এই দুই ব্যাপারে উদাসীন। ফলে কম মজুরি, নিরাপত্তাহীনতার সাথে সাথে অনুন্নত স্বাস্থ্যকাঠামো বাগানের শ্রমিকদের বাধ্য করে চিকিৎসা ছাড়াই রোগ পুষে রাখতে আর অবশেষে ঘটে অকাল মৃত্যু।